নিউজ ডেস্ক
Dec 18, 2020 - Friday
ধূপগুড়ি
18
ধূপগুড়ি বাজারে বিধ্বংসী আগুন, ভস্মীভূত হলো ১২০ টি দোকান। ক্ষতি প্রায় ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তির, বিশাদের সুর ধূপগুড়ি জুড়ে।
ধূপগুড়ি বাজারে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড, ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় শতাধিক দোকান। প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যাবসায়ীদের । জানা গেছে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ২ টা নাগাদ ধূপগুড়ি বাজারে বিধ্বংসী আগুন লাগে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে ধূপগুড়ি দমকলের দুটি ইঞ্জিন সহ ধূপগুড়ি দমকল বাহিনীর কর্মীরা।তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা শুরু করে কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণের আগেই তাদের জল শেষ হয়ে যায়। এরপর এই সমস্যায় পড়েন দমকল কর্মীরা। তারা ছুটে যান পিএইচপিতে কিন্তু সেখানে জল মিলেনা এরপর সেখান থেকে দমকল কর্মীরা ছুটে যান আশেপাশের জলাশয় এর খোঁজে, কিন্তু সেখানে গিয়েও জল এর সন্ধান মিলেনি। কারণ শহরের একাধিক জলাশয় অবৈধভাবে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এরপর ছুটে যান নদীতে এবং সেখান থেকে জল সংগ্রহ করে তারা আগুন নেভানোর জন্য ঘটনাস্থলে আসেন। ততক্ষনে সময় প্রায় এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। আর আগুন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আগুনের লেলিহান শিখা দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল, আর ধীরে ধীরে গ্রাস করতে শুরু করেছিল একের পর এক দোকা। পরে ময়নাগুড়ি, বক্সিরহাট, জলপাইগুড়ি থেকে আরো ছয়টি দমকল ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু বাজারের কাছে পিঠে কোন জলাশয় না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়। এমনকি জল মিলেনি পিএইচই তেও। এদিকে ততক্ষণে আগুন মারাত্নক আকার ধারণ করেছে। একের পর এক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দোকানদারেরা তাদের শেষ সম্বলটুকু বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন।কিন্তু অনেকই শেষ রক্ষা করতে পারে নি।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় বিধায়ক মিতালী রায়। বিধায়ক মিতালি রায় জানান," কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।মূখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। তাই বিষয়টি ফোন করে মূখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। মূখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন কোনো অসুবিধা হবে না। তিনি বিষয়টি দেখবেন।" এরপর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আগুনে ভস্মীভূত এলাকা পরিদর্শনে সকালে একে একে আসেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা বর্মন, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নূরজাহান বেগম, সদস্যা মমতা সরকার বৈদ্য, রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়, জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, সহ প্রশাসনিক আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা।
ধূপগুড়ি ব্যবসায়ী সমিতি ফোসিড এর সম্পাদক প্রদীপ পাল বলেন, "প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই অগ্নিকাণ্ডে। ১২০ টির বেশি দোকান পুরোপুরিভাবে ভস্মীভূত হয়েছে এবং আংশিক ভস্মীভূত হয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি দোকান। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি আমাদের দোকান ঘর বানিয়ে দেওয়ার জন্য। এমনকি যতদিন না ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে শুরু হচ্ছে মাসিক অন্তত ব্যবসায়ীদের ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হোক।পাশাপাশি এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছে ব্যবসায়ী সমিতির লোকেরা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানান," মূখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এখানে এসেছি। ঘটনাস্থল থেকে দাঁড়িয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কে ফোনে সমস্ত ঘটনা জানালা। ধূপগুড়ি কাপড়পট্টি জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদে অধীনস্থ। তাই ফিরহাদ হাকিম কে বললাম জেলা পরিষদের এই বাজারটি পুরসভার হাতের স্থানান্তরিত করে দেওয়া হোক, কারণ পুরসভার মধ্যেই বাজারটি রয়েছ। তিনি জানালেন ব্যবসায়ীদের নতুন দোকান ঘর করে দেওয়া হবে। সরকার ব্যবসায়ীদের পাশে আছে।"
অগ্নিকাণ্ডে ধূপগুড়ি বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। ব্যবসায়ীরা জেলাশাসককে কাছে পেয়ে ধূপগুড়িতে জলের রিজার্ভার থেকে দমকলের আরো আধুনিকিকরণের কথা জানান। জেলাশাসক তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনারা জায়গাটি পরিস্কার করে নিন। আপনাদের সমস্যাগুলো লিখিত আকারে জানান। আমরা যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা করব।"
এদিকে বিকেলে ধূপগুড়ি বাজারে আসেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব, জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দুলাল দেবনাথ। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান," বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। আধুনিক মার্কেট করা দরকার। ব্যবসায়ী সমিতির যদি কোনো প্রস্তাব বা আবেদন থাকে আমাকে লিখিত আকারে জানান, আমি মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা বিষয়টি জানাবো। অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।"
বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভয়ঙ্কর হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ শহরে একাধিক জলাশয় অবৈধভাবে ভরাট করে ফেলা। শাসক দলের নেতারা জলাশয় ভরাট করে অবৈধভাবে প্রমোটিং ব্যবসা চালাচ্ছেন, কেউ আবার স্কুল তৈরি করে বসে রয়েছেন। এমনকি দমকল কর্মীদের জল খুঁজতে হয়রানির শিকার হতে হয় আর তাতেই দেরি হয়ে যায় এবং চার কারণে এত ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো।